একাই কোটি টাকার ইয়াবা লুটে নিলো সন্ত্রাসী আবছার, ওসির করার কিছুই নেই!

কক্সবাজারের টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজির পাড়ায় মিয়ানমার থেকে পাচারকৃত ১ লক্ষ ৪০ হাজার পিস ইয়াবা লুটের অভিযোগ উঠেছে আত্মস্বীকৃত মাদককারবারী আবছারের বিরুদ্ধে। আবছারের বড় ভাইসহ আইনশৃংখলা বাহিনী ও নামসর্বস্ব সাংবাদিকরা মিলেমিশে লুটকৃত মাদকের টাকা ভাগ ভাটোয়ারায় ঘটনা ধামাচারা পড়েগেছে বলেও জানাগেছে।
গত (৬ ফেব্রুয়ারী) বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের উত্তর নাজির পাড়া এলাকার নাফ নদীর বেড়িবাধ সংলগ্ন মাঠে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার কয়েকদিন পর স্থানীয় কয়েকটি অনলাইন পোর্টালে বিষয়টি প্রকাশ করা হলেও পরবর্তিতে ওই সব পোর্টাল অদৃশ্য কারনে নিউজটি সরিয়ে ফেলে।
ঘটনায় অভিযুক্ত মোহাম্মদ আবছার (৪০) সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়া এলাকার নুরুল আলমের ছেলে। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য মতে তার বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগে দেশের বিভিন্ন থানায় ডজনের অধিক মামলার রেকর্ড রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ৬ ফেব্রুয়ারী ভোরে মৌলভী পাড়ার আবু তাহেরের নেতৃত্বে মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসা ১লাখ পিস ইয়াবার চালান খালাস করা হয় মৌলভীপাড়া ঘাটে। বিজিবির ধাওয়ার মুখে আবু তাহের ও দুইজন রোহিঙ্গা নাগরিক নাজির পাড়ার দক্ষিন প্রান্ত থেকে উত্তর প্রান্তে মাদক ভর্তি বস্তা সহ পালিয়ে যায়। ভোর সাড়ে ৫টার সময় তারা সন্ত্রাসী আবছারের সামনে পড়ে। আবছারের সাথে তাহেরের পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আবছারকে দেখে পালিয়ে যায় তাহের। এসময় মাদকের বস্তা ফেলে অপর দুই রোহিঙ্গাও পালিয়ে যায়। পরে আবছার মাদকের ব্যাগটি নিয়ে নাজির পাড়া ঢুকে পড়ে। এই ঘটনার পর আবছার স্ত্রী সন্তান নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান নেয় এবং দুপুর পর্যন্ত তার ব্যবহৃত ফোন বন্ধ রাখে। পরিস্থিতি আবছারের অনুকুলে আসার পর গত ২০ ফেব্রুয়ারী আবছার পরিবার নিয়ে নাজির পাড়া ফিরে এসে প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করছে।
সূত্রটি আরো জানায়, ঘটনার পর বিষয়টি পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সহ বেশ কয়েকটি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে অবহিত করা হয়। কিন্তু তাদের কোন কর্মকান্ড লক্ষ্য করা যায়নি।
এবিষয়ে আবছারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি একজন পরোয়ানা ভূক্ত আসামী তাই সারারাত জেগে থাকি সুযোগ বুঝে ভোর বেলায় ঘুমাতে যায়। আমি ইয়াবা ডাকাতির সুযোগ পেলাম কয়। তাছাড়া তাহের ভূট্টো হত্যা মামলার আসামী, তাকে ধরে পুলিশে দেওয়ার চেষ্টা করছি। সেখানে তাহেরকে পেয়ে ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
এদিকে আবছারের এক নিকট আত্মীয় জানান, আবছার গিরগিটি স্বভাবের লোক। সে তাহের নয় টাকার জন্য সে তার বাবার খুনির সাথেও হাত মিলাতে পারে।
এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে আবছারের বড় ভাই বেলালকে ৩০ হাজার ইয়াবা ও স্থানীয় সন্ত্রাসী, জন প্রতিনিধি এবং আইনশৃংখলা বাহিনীর কতিপয় কর্মকর্তা ও নাম সর্বস্ব স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিককে মোটা দাগের অর্থের ভাগ দিয়েছে বলে একটি সূত্র জানায়। তবে এটি যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ গিয়াস উদ্দীনের দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে জানান, তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানে না। লুটকৃত মাদক উদ্ধারে তার দ্বায়বদ্ধতা নেই এবং এই বিষয়ে তার করার কিছুই নাই। এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেবেন। অবৈধ মাদকের জন্য কেউ অভিযোগ দেওয়ার নজির আছে কিনা, জানতে চাওয়া হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর টেকনাফ বিশেষ জোনের সহকারী পরিচালক সিফাত তাসনিম বলেন, আবছার কর্তৃক মাদক লুটের বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। কার মাধ্যমে চালানটি বিক্রি করেছে সেটার তথ্য পেয়েছি। আবছারের বিরুদ্ধে ইতি পূর্বেও মাদকের বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে।