সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৫:১২ পূর্বাহ্ন

মা এর আগে কখনো বিরিয়ানি খাননি

Reporter Name / ৭০ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

মায়ের জনম কেটেছে দুঃখে দুঃখে। চোখের জল আর শরীরের ঘামই ছিল তাঁর একমাত্র সম্বল। তিনবেলা দুমুঠো ভাত খাওয়াই দায় হতো আমাদের। দিনভর ঘরের কাজের পাশাপাশি গরু-ছাগল পালন করেন মা।

এভাবেই তিনি সংসারটা টিকিয়ে রেখেছেন। কিন্তু এখন একটু পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে ওঠেন। কারণ অপারেশনের পর এখন তাঁর ডান হাতে মূল হাড় নেই। যাহোক কোথাও ঘুরতে যাওয়া মায়ের কাছে বিলাসিতার মতো।

বাইরে যাওয়া বলতে পাশের গ্রামে আমার নানি ও খালাদের বাসায় পর্যন্ত গিয়েছেন। কিন্তু আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল মাকে অন্তত রাজশাহীর পর্যটনস্পটগুলো ঘুরিয়ে দেখাব। ভালো কোনো রেস্তোরাঁয় খাওয়াব। কারণ বিয়ের পর থেকে তিনি কোথাও ঘুরতে যাননি।

এবারের ঈদের দুদিন আগে মাকে বলে রেখেছিলাম, ‘তোমার পছন্দের শাড়িটা পরবে। আমরা ঘুরতে যাব।’ শুনে বললেন, ‘আমারে দুইশটা টাকা দে।’ পরে দেখলাম সেই টাকা দিয়ে কানের ঝুমকা আর হাতের চুড়ি কিনেছেন। সেদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি—বেশ কয়েক বছর আগে বাবার দেওয়া একটা শাড়ি পরে মা রেডি।

মাকে গাড়িতে নিয়ে ঘোরানোর খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আমার নিজের কোন গাড়ি নেই। একটা বাইকে মাকে নিয়ে রওনা দিলাম। মা আমাকে শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন। গ্রামের রাস্তায় লোকজন দেখছিল আমাদের। কী ভালো লাগছিল! তখন রবীন্দ্রনাথের ‘বীরপুরুষ’ কবিতা খুব মনে পড়ছিল—‘তুমি যাচ্ছ পালকিতে, মা, চ’ড়ে/দরজা দুটো একটুকু ফাঁক ক’রে,/আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার ‘পরে/টগবগিয়ে তোমার পাশে পাশে।’

আমার ফুফা রাজশাহী মেডিক্যালে ভর্তি। হাসপাতালের গ্যারেজে বাইক রেখে তাঁর সঙ্গে দেখা করলাম। পরে অটো নিয়ে আই-বাঁধ গেলাম, সেখানে কিছুক্ষণ বসে গল্প করলাম। মা কখনো শপিং মলে যাননি। আই-বাঁধের কাছেই জয় সিলিকন টাওয়ার। সেখানে নতুন সিনেপ্লেক্স আছে। ভাবলাম, মাকে সিনেমা দেখাব। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেদিন টিকিট পাইনি।

একটা জিনিস লক্ষ করলাম, মা খুব চুপচাপ হয়ে আশপাশ আর মানুষগুলো কী করছে তা দেখছিলেন। পরে রিকশায় টি-বাঁধে গেলাম। টি-বাঁধ তাঁর পছন্দ হয়েছে। কারণ এখানে অনেক গাছ আর মৃদু বাতাস বয়ে যাচ্ছিল। সেখানে শরবত খেলাম দুজনে। পরে রিকশা নিয়ে রাজশাহীর বিখ্যাত মুক্তমঞ্চ দেখালাম। সেখান থেকে পদ্মার পারে। এরই মধ্যে বৃষ্টি শুরু হলো। রাজশাহী নিউ মার্কেটের সামনে কাচ্চি ভাই নামে একটা রেস্তোরাঁ চালু হয়েছে। মা এর আগে কখনো বিরিয়ানি খাননি। ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ভিজেই সেখানে গিয়ে বিরিয়ানি খেলাম। মা খুব তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছিলেন। ততক্ষণে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে। আর বৃষ্টিও থামছিল না। ভেবেছিলাম, মায়ের জন্য শাড়ি কিনব। কিন্তু মা বললেন, বাবা আজ থাক। পরে বাড়ির পানে পা বাড়ালাম। ফেরার পথে মা বললেন, ‘অনেক বছর পর আজ খুব ভালো লেগেছে রে বাবা।’

আসিফ আলী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর